বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়াকে বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “শওকত উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ ছিল। সেসকল অভিযোগের কারণেই তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রোববার (১২ জানুয়ারি) মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান এ আদেশ দিয়েছেন।”
পাগলা মসজিদ কমিটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শওকত উদ্দিন ভূইয়া সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০১৫ সালে চাকুরি নিয়োগের পরীক্ষার মাধ্যমে পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।
এছাড়াও প্রায় সময়ই মসজিদে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং আর্থিক অনিয়মের সঙ্গেও তার জড়িত থাকার অভিযোগে রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে বছরের পর বছর অনেকে অভিযোগ ও বিভিন্ন মহলে আলোচনা হলেও প্রশাসনিক কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বরখাস্তকৃত প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূইয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া তাকে মোবাইলে ফোন করে মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন। তবে কী কারণে মসজিদে আসতে বারণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তেমন কিছুই বলেননি। তবে আমার ধারণা, অনেকেই আমাকে আওয়ামী লীগের সমর্থক মনে করেন, তাই হয়তো এমনটা হয়েছে।"
প্রতি তিন মাস পরপর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকাসহ স্বর্ন-রূপার অলংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। এতে করে, ইতিমধ্যে দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে। এ পাগলা মসজিদের আয় দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্স নির্মাণ করার কাজ হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় আড়াইশ বছর আগে পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদ এলাকা জেলা শহরের হারুয়ায় থামেন। তাকে ঘিরে সেখানে অনেক ভক্তকুল সমবেত হন। ওই পাগলের মৃত্যুর পর সমাধির পাশে এই মসজিদটি গড়ে ওঠে। পরে কালক্রমে এটি পরিচিতি পায় পাগলা মসজিদ নামে।